আপনি জানেন কি? সমুদ্রের পানি এবং আকাশ নীল দেখায় কেন?



সমুদ্রের পানি এবং আকাশ নীল দেখায় কেন?


সমুদ্রের পানি এবং আকাশ নীল দেখায় কেন?




এই বিষয়টি জানার আগে আমাদেরকে দুটি বিশেষ ঘটনাকে বুঝতে হবে ।

প্রথম ঘটনাটি হলোঃ

আলোর বিক্ষেপণ

সাদা আলোর সাতটি রঙে বিশ্লিষ্ট হওয়ার ঘটনাকে আলোর বিক্ষেপণ বলে।

সাদা আলোর বিক্ষেপণ হল এমন একটি ঘটনা যেখানে সাদা আলো তার উপাদান রঙে বিভক্ত হয়। এটি বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা সাদা আলোকে বিভিন্ন কোণে বিচ্ছুরিত করে। এই ঘটনাটি রংধনু সৃষ্টি করে।


দ্বিতীয় ঘটনাটি হলোঃ

আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য

সাদা আলো হল বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর সমষ্টি। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল আলোক তরঙ্গের দুটি শীর্ষের মধ্যে দূরত্ব। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য মিটার (মি) বা ন্যানোমিটার (এনএম) এ পরিমাপ করা হয়।

আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য তার বর্ণের সাথে সম্পর্কিত। বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, প্রায় ৩৮০ এনএম। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৭০০ এনএম।

সাদা আলো হল বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর সমষ্টি। যখন সাদা আলো একটি প্রিজমে প্রবেশ করে, তখন আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিভিন্ন কোণে প্রতিসরণ করে। এটি রংধনু তৈরি করে।

এবার মূল প্রশ্নে আসা যাক,


সমুদ্রের পানি এবং আকাশ নীল দেখায় আলোর বিচ্ছুরণের কারণে। সূর্য থেকে আগত আলো সাদা আলো, যা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর মিশ্রণ। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট, বিচ্ছুরণ তত বেশি। নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট, তাই এটি সবচেয়ে বেশি বিচ্ছুরিত হয়।

সমুদ্রের পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করলে, নীল আলো সবচেয়ে বেশি বিচ্ছুরিত হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছায়। তাই আমরা সমুদ্রের পানিকে নীল দেখি।

আকাশও একই কারণে নীল দেখায়। বাতাসেও আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। তবে, বাতাসে নীল আলোর পাশাপাশি সবুজ, হলুদ, কমলা ইত্যাদি রঙের আলোও বিচ্ছুরিত হয়। কিন্তু নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট হওয়ায় এটি সবচেয়ে বেশি বিচ্ছুরিত হয়। তাই আমরা আকাশকে নীল দেখি।

সমুদ্রের গভীরতা যত বেশি হয়, তত কম আলো সমুদ্রের তল থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পৌঁছায়। তাই গভীর সমুদ্র সবুজ বা কালো দেখায়। আকাশের উচ্চতা যত বেশি হয়, তত বেশি আলো বিচ্ছুরিত হয়। তাই উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে আকাশ সাদা বা ধূসর দেখায়।

উল্লেখ্য, সমুদ্রের পানিতে লবণ ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের উপস্থিতিও সমুদ্রের পানির রঙকে কিছুটা প্রভাবিত করে। লবণ ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের উপস্থিতিতে সমুদ্রের পানি কিছুটা সবুজ বা হলুদ দেখায়।


কিন্তু ,প্রশ্ন হলো-

বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম!তাহলে,আকাশের রঙ বেগুনী নয় কেন?

বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, প্রায় 380 ন্যানোমিটার।

  • নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেগুনি আলোর চেয়ে একটু বেশি, প্রায় 450 ন্যানোমিটার।

  • সবুজ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য নীল আলোর চেয়ে একটু বেশি, প্রায় 500 ন্যানোমিটার।

  • হলুদ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবুজ আলোর চেয়ে একটু বেশি, প্রায় 570 ন্যানোমিটার।

  • কমলা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হলুদ আলোর চেয়ে একটু বেশি, প্রায় 600 ন্যানোমিটার।

  • লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমলা আলোর চেয়ে একটু বেশি, প্রায় 700 ন্যানোমিটার।

বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম! কিন্তু আকাশ নীল দেখায় কেন তার দুটি কারণ রয়েছে:প্রথম কারণ হলো

বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম (প্রায় 380 ন্যানোমিটার)

হলেও, নীল আলোরও বেগুনি আলোর কাছাকাছি

(প্রায় 450 ন্যানোমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে ।


বায়ুমণ্ডলে থাকা কণাগুলির আকার নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকারের সাথে বেশি মিল রয়েছে। ফলে নীল আলো বেগুনির চেয়ে বেশি কণায় আটকে গিয়ে বেশী পরিমানে বিচ্ছুরিত হয়।

আরেকটি কারণ হলো

আমাদের চোখ নীল আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল: বেগুনি আলোর চেয়ে আমাদের চোখ নীল আলোকে বেশি ধরতে পারে। অর্থাৎ, আমরা নীল আলোকে বেশি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই।

একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝানো যেতে পারে। ধরুন একটি ঘরের মধ্যে একটি আলোর উৎস আছে এবং ঘরের চারপাশে বিভিন্ন রঙের কাগজ ঝুলানো আছে।এবং নীল ও বেগুনি কাগজ পাশাপাশি একটার পর একটা সাজানো আছে। আলোর উৎস থেকে আসা আলো বিভিন্ন রঙের কাগজে আপতিত হয়ে বিভিন্ন কোণে বিচ্ছুরিত হবে। এই বিচ্ছুরিত আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করে এবং আমরা বিভিন্ন রঙের কাগজকে বিভিন্ন রঙে দেখতে পাই।

এখন,  বেগুনি ও নীল কাগজের দিকে তাকালে, আমাদের চোখ নীল রঙের প্রতি সবচেয়ে  বেশী থাকায় সংবেদনশীল আমরা নীল কাগজকে সবচেয়ে আগে  দেখতে পাব।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ